শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০০৯

মন খুলবার শব্দ

মন খুলবার শব্দ পেলাম নরম এই কুয়াশা শরতে, ভেজা ঘাসমাঠ হাহা হিহি করে জানিয়ে গেল রোদের কাছে এই কাণ্ডকীর্তি, বিপ্লবী ঘটনা যেন পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে

কথার শক্তি বিষয়ে আমার ধারণা জন্মেছিল বেশ বালক বয়সে, কথাদের কলা হয়ে উঠতে যে অস্ত্রশস্ত্র লাগে, লাগে যে শানবিদ্যা, বাতাসের চেয়েও ওটা কম আয়ত্তে ছিল, এমনকি জানতাম না যে আয়রনি কাকে বলে, ঘৃণাকে ঘৃণার অধিক কিছু কখনো ভাবি নি

বহু তিতিক্ষা তরণি বেয়ে মতিফুল ফুটল এবার, রূপকাহিনির ভিড়ে ঢাকের বাদ্যের নিচে প্রকাশ্য শব্দ পেলাম মন খুলবার, সাক্ষী হয়ে মাথা নাড়ল শস্যসুরভি

এমভি নন্দিতা

তুমি এসে ধাক্কা দিলে আমার পন্টুনে
ধ্বনি-প্রকম্পনে সমুদ্র ঈগলগুলো কেঁপে ওঠে
মোহনার জলমাখা গোপন বেদিতে
রৌদ্রগন্ধময় হাওয়া এসে খেলে

সমতল ফুঁসে আসা জল
পাটাতন ছুঁয়ে গেলে
যৌথ-যুগ্ম যে সৌন্দর্য জন্ম নেয়
তার কষাঘাতে হই আমিও ঈগল

কাঁপি, বিশাল তোমার দাহে

নন্দন প্রহার

কটিভূষণ পরার মতো কেউ কি আজ আর নেই এই ভূ-ভারতে
অরব মেখলা, মানস-সমুদ্র সন্নিহিতা, একে একে উঠে যাচ্ছে তীরে
খাঁখাঁ শূন্যতার লেজ ধরে নেই-গ্রামে নামত ঝুলে থাকবে বলে

ছিলে বাহানার ধনী, নিবিড় বাহানা তুমি কর নি অথচ
ফুটে ওঠে লালসা কাহিনি এক মনের আনাচে

ভালোবাসি নিজেকেই বেশি এই অপবাদ কাঁধে নিয়ে
একটা বসন্ত পুরো হিমালয় পাড়ি দিয়ে ফিরেছি ঘুরেছি
লামার পাহাড় ধরে গম্ভীর তিব্বতে
কটিবন্ধে গাঁথা ছিল ভোঁতামুখ অহিংস তরবারি

তুমি কতদূর যাবে ওই বাতিকসমেত কোনো আনকোরা পথে
যদি দেখ নি পথের পাশে চিরপুষ্প একাকী ফুটেছে
পুরোটা শ্রাবণ জুড়ে বিলিয়েছে গন্ধ নিরলস

পথে নাম নিও চিরপথিকের
এই নাও মৃদুবিছা প্রেমচন্দ্রহার
মৌনতার ভাষাবলি নন্দন প্রহার

পুরুষের ধর্ম

নারীমানুষের ধর্ম আছে, নারীশরীরের নেই
সম্প্রদায় নিরপেক্ষ খুব নারীর শরীর, জাতপাতহীন

জাতপাতে অন্ধ ধর্মঅলারাও ধর্ম খোঁজে না বিশেষ শরীর পূজায়

পুরুষের ধর্ম বড়ো বিচিত্র জিনিস

তেভাগা

এতদিন আধিয়ারই আছি
আজ থেকে পেতে চাই তেভাগা হিসেবে

রতিচাষে যত ফল
মাড়াই করতে চাই নিজস্ব খোলানে
তুমি তো নিষ্ক্রিয় জোতদার
ফসল ফলাতে যত প্রাক-আয়োজন
সেচকাজ আগাছা নিড়ানি ও হলকর্ষণ
সব আমারই শ্রমজাত
লাঙ্গল-জোয়াল শক্তি-বীর্য তাও
মাড়াইটা কেন তবু তোমার অধীনে

এতদিন ঠকিয়েছ থেকেছি নিশ্চুপ
আজ থেকে পেতে চাই তেভাগা হিসেবে

কমরেড
লাল ঝান্ডা তোলো

রন্ধনশালার রাজনীতি

রন্ধনশিল্পের আমি আশপাশ দিয়ে নেই
সে জগতে সর্বেসর্বা আজো মা-বউ-বোনেরা

হেঁশেলের চৌহদ্দিতে মায়া সুতো দিয়ে বেঁধে রেখে
নারীদের আমরা অনেক পিছিয়ে দিয়েছি

এটা যদিও ঠিক যে মাপমতো পানি দিয়ে মাড় না-গালিয়ে
ভাত রাঁধা আমি শিখে গেছি
সানফ্লাওয়ারের মতো বড়ো করে ডিম আমিও ভাজতে পারি
আমার রাঁধা ডালের পানি চেটে খেতে হয়
তবু এইসব হলো গিয়ে ঠেকা কাম
নিয়মিত হেঁশেল ঠেলতে আমি কখনো যাই না

নারীদের রান্নাবান্নাকে আমরা শিল্প বলি
তবু নিজেরা করি না

আমরা অন্য শিল্পের লোক

গুমরসম্মত

সকল দরজা হাট হয়ে গেলে রহস্যক্ষেপণ ঘটে প্রাসাদের
শূন্য হোক তবু লাগে চাবিহীন পুরানো সিন্দুক, গুমরসম্মত
মানুষ কেননা একজীবন সাবাড় করে দিতে পারে
রহস্যসূত্র সন্ধান করে করে

অকপটতা গুণ ধর্মের
তবু বহুদিন ধর্মের ছিলে না-হয়ে ধার্মিক

বাইরের আলো ঘরে আসে তো আসুক
ঘরের আলোক যাতে বাইরে না-যায়
রাখো তার পাকাপাকি আয়োজন করে
সভ্যতার তরী বেয়ে আসা এইসব

সার সার স্থাণু কর মুদ্রারসদের গোপন কলস
রহস্যসমিধ কিছু দৃশ্য হোক প্রাসাদের ঘুলঘুলি পথে
বিস্ময়ে আবিষ্ট হোক অভ্যাগতজন

সকল দরজা হাট হয়ে গেলে
ফাঁস হয়ে যায় সব রূপের গুমর

ভ্রমণ, গদ্যভঙ্গিতে

গদ্যভঙ্গির অদূরে স্থাপিত সুউচ্চ আশ্রয়কেন্দ্রে তোমার
কাটিয়ে এসেছি গুরুতর সন্ধ্যা এক থই থই এবার ভাদরে

পথে ছিল জল বাক্যে বাক্যে ঢেউ চাল ছুঁয়ে থাকা
বাঘে-মোষে একাকার হয়ে থাকা পৃষ্ঠা জুড়ে
বহুত্ববাদের সব চারাগাছ দুলতে দেখেছি

বিষাক্ত একটা সাপ প্রকাশ্যে সাঁতরে এসে যে বাক্যে বসেছে
পাশে তার একটি শিশুর হাতে লুটছে পৃথিবী

বানের জলের নেই ছেদবিভাজন
টানাস্রোত ভেঙে ভেঙে যেখানে দাঁড়াই
সেটা ছিল বিস্তারিত ফুটনোট গলাঅব্দি জলে

স্বতঃস্বচ্ছ এক বাক্যের কোমর ধরে সামনে এগোতে দেখি
একটু আধটু করে কমে জল জেগে ওঠে ঊর্ধ্বমুখী সিঁড়ি

মিতক্রিয়াময় বাক্যদের জানালায় টইটই প্রভূত বাতাস

শৈলীপনা

একটা শব্দকে ধরে ঝুলে পড়ে কতদূর যাওয়া যায়
দেখিয়ে গেছে আমাদের সুরেশ কাহারি

রেশ ধরে যেতে গেলে জানত সুরেশ
যারা থাকে পড়ে থাকে পথের দুধারে

একদিন ঝুলে পড়া ছেড়ে দিয়ে
যথেচ্ছ সে ভেসে গেল নিরাবলম্বন
যাপনবিষাদঘেঁষা ওর সব স্মৃতি থেকে
রূপের কুহেলি মেখে উঠে আসে
স্যাঁতসেঁতে জীবনের আনাচকানাচ

ওর কিছু দস্যিপনা আমাদের ভালো লেগেছিল
ওর কিছু শৈলীপনা মিথ্যে নয় আজো ভালো লাগে

লঘুকথা

কী যে হয়
প্রতিদিন আসে না মনে গুরুভাব

নিটোল লঘুর যত নর্তনকুর্দনে
আরো যদি মুড়িয়ে ফেলি পত্রপল্লব
নাসারন্ধ্র ভরে যাবে অঙ্গারাম্লজানে

বরং আজ নিশানা করে রাখি তাক
কাঁধের গামছা খালই ও জাল রাখি তৈরি পাশাপাশি
ভোর ভোর বেলা কাল
না-টুটতে নেশা মেছো বাঘেদের
খুঁজে নেব অথই জলের কোনো যথাযথ থই

আজ থাক
সূর্য তো কালও উঠবে
রাত্তিরে চাঁদও